কীভাবে তোমার রবকে চিনবে?
কীভাবে তোমার রবকে চিনবে?
আল-কুরআনে মহান রব দু’টি উপায়ে তাঁকে চেনার জন্য বান্দাদেরকে আহ্বান করেছেন। সে পদ্ধতি দু’টি হলো:
প্রথমত: তাঁর সৃষ্টিকর্মের প্রতি দৃষ্টি দেওয়া ও গভীরভাবে তাকানো।
দ্বিতীয়ত:
তাঁর আয়াতসমূহে চিন্তা ও সেগুলো নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা; তন্মধ্যে প্রথম
প্রকার হলো তাঁর দৃশ্যমান আয়াত বা নিদর্শন আর দ্বিতীয় প্রকার হলো
বিবেকগ্রাহ্য শ্রবণযোগ্য আয়াত বা নিদর্শন।
.
প্রথম প্রকারের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
“নিশ্চয়
আসমানসমূহ ও জমিনের সৃষ্টিতে, রাত ও দিনের বিবর্তনে, সে নৌকায় যা সমুদ্রে
মানুষের জন্য কল্যাণকর বস্তু নিয়ে চলে (রয়েছে নিদর্শনসমূহ এমন জাতির জন্য,
যারা বিবেকবান)।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৬৪]
.
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেছেন,
“নিশ্চয়
আসমানসমূহ ও জমিনের সৃষ্টি এবং রাত ও দিনের বিবর্তনের মধ্যে রয়েছে বিবেক
সম্পন্নদের জন্য বহু নিদর্শন।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৯০] এ জাতীয় আয়াত
আল-কুরআনে অনেক রয়েছে।
.
দ্বিতীয় প্রকারের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
“তবে কি তারা কুরআন নিয়ে গভীর চিন্তা- ভাবনা করে না?” [সূরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ২৪]
.
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেছেন,
“তারা কি এ বাণী সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করে না?” [সূরা আল-মুমিনূন, আয়াত: ৬৮]
.
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেছেন,
“আমি
আপনার প্রতি নাযিল করেছি এক বরকতময় কিতাব, যাতে তারা এর আয়াতসমূহ নিয়ে
গভীরভাবে চিন্তা করে।” [সূরা সোয়াদ, আয়াত: ২৯] এ ধরণের অনেক আয়াত রয়েছে।
.
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেছেন
“বিশ্বজগতে
ও তাদের নিজেদের মধ্যে আমি তাদেরকে আমার নিদর্শনাবলী দেখাব যাতে তাদের
কাছে সুস্পষ্ট হয় যে, এটি (কুরআন) সত্য।” [সূরা ফুসসিলাত, আয়াত: ৫৩]
অর্থাৎ
আল-কুরআন সত্য। এ আয়াতে আল্লাহ বলেছেন যে, তিনি অবশ্যই তাদেরকে তাঁর
দৃশ্যমান সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী দেখাবেন যাতে তাদের কাছে সুস্পষ্ট হয় যে,
তিলাওয়াতকৃত এ কুরআন সত্য।
.
তারপর
তিনি তাঁর দেওয়া সাক্ষ্যকেই তাঁর পক্ষ থেকে আগত সকল সংবাদের সত্যতার জন্য
যথেষ্ট বলে ঘোষণা করেছেন, কারণ; তিনি তাঁর রাসূলগণের সত্যতার উপর যাবতীয়
দলীল-প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
.
অতএব,
আল্লাহ তা‘আলার আয়াতসমূহ তাঁর সত্যতার প্রমাণ, আর আল্লাহ তা‘আলা স্বয়ং
তাঁর রাসূলগণের আয়াতসমূহের সত্যতার উপর প্রমাণ। তিনি নিজেই সাক্ষী ও
সাক্ষ্য সাব্যস্তকৃত (সত্তা)। আর তিনি নিজেই প্রমাণ ও নিজের ওপর প্রমাণবহ।
তিনি নিজেই নিজের জন্য দলীল। যেমন কোনো এক বিজ্ঞলোক বলেছেন,
.
‘কিভাবে আমি তাঁর (আল্লাহর) প্রমাণ তালাশ করবো, যিনি নিজেই আমার কাছে সব কিছুর জন্য প্রমাণ?
তাঁর ব্যাপারে যে দলীলই তালাশ করি, তাঁর অস্তিত্ব সে গুলোর চেয়ে অধিক স্পষ্ট।’
.
এ কারণেই রাসূলগণ তাদের জাতির কাছে বলেছিলেন,
“(তাদের রাসূলগণ বলেছিল), আল্লাহর ব্যাপারেও কি সন্দেহ?” [সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ১০]
.
তিনি
তো সব জ্ঞাত বিষয়ের চেয়ে অধিক জ্ঞাত, সব দলিলের চেয়ে অধিক স্পষ্ট।
প্রকৃতপক্ষে সব বস্তু তাঁর (আল্লাহর) দ্বারাই চেনা যায়, যদিও তাঁর কাজসমূহ ও
হুকুমের ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা ও দলীল-প্রমাণ তালাশের মধ্যেও তাঁকে চেনা
যায়।
.
.
বইঃ ইবনুল কাইয়্যেম রহ.-এর আল-ফাওয়ায়েদ অবলম্বনে ‘মুখতাসারুল ফাওয়ায়েদ’
লেখকঃ ড. আহমাদ ইবন উসমান আল-মাযইয়াদ
অনুবাদঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন আল-আযহারী
সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া